বাংলা সাহিত্যের মহারাজ হুমায়ূন আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আরিফ হোসেন
আপলোড সময় :
১৯-০৭-২০২৩ ১১:৪৪:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৯-০৭-২০২৩ ১১:৪৪:২১ পূর্বাহ্ন
তার প্রিয় ঋতু ছিল বরষা। তাই গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক, সিনেমা কিংবা গানে, বৃষ্টিবন্দনা করেছেন বহুবার, বহু ঢঙে
হুমায়ূন আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সোনালী রাজশাহী: বাংলা সাহিত্যের কিংবতন্তী হুমায়ূন আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিক। তাকে হারানোর শোক এখনো বাংলাভাষী পাঠকদের মনে। তিনি বেঁচে আছেন অগণিত পাঠকের মনে। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর
নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে। বাংলা সাহিত্যের রাজাধিরাজ হুমায়ূন আহমেদl মহারাজ তিনি। লেখক নন কেবল স্বপ্নবান। যাপন যেন উৎসবের হয় সেটাই ছিল তার আরাধ্য পথ। লিখেছেন তিনি, বুদ হয়েছেন পাঠক। এখনো তিনি আছেন গান-নাটক আর হিমু-রুপাদের সংলাপে-সংগীতে।
বুধবার (১৯ জুলাই) এক বর্ষায় অনেককে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি। আজ নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও বাংলা সাহিত্যের রাজাধিরাজ হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। তার প্রিয় ঋতু ছিল বরষা। তাই গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক, সিনেমা কিংবা গানে, বৃষ্টিবন্দনা করেছেন বহুবার, বহু ঢঙে। আর এই বৃষ্টিময় বরষা দিনেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে। এক স্বপ্নচারী জাদুকরের গল্প। শুধু নিজে স্বপ্ন দেখেননি সেই সঙ্গে একটি জাতি কিংবা পুরো প্রজন্মের স্বপ্নের কাণ্ডারি হয়ে আছেন তিনি। চোখের সামনে তার সাজানো বাগান, পড়ে আছে নিজ হাতে গড়া সাম্রাজ্য শুধু নেই একজন হুমায়ূন আহমেদ। তার অমিয় গদ্য রসে বুঁদ হয়ে একটি জাতি তথা পুরো সমাজকে করেছেন পাঠমুখি। তার শব্দ মালার গাথুনীতে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন হাজারো হিমু-রূপাকে। তাইতো আজও নীল শাড়ি পরে কোনো এক রূপার অনন্ত অপেক্ষার নাম হুমায়ূন আহমেদ।
শুধু তার লেখনি দিয়ে মুগ্ধ করেই নিজের দায় সারেননি, নিজের কাঁধে টেনে নিয়েছিলেন পুরো প্রকাশনা শিল্পকে। তার হাত ধরে শুধু পাঠক তৈরি হয়নি বরং লেখক-প্রকাশকদের ভরসার নাম হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য। হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে।
১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের লাশ। ২৪ জুন তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ ও ‘নয় নম্বর বিপদসংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।
এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ তার গড়া স্বপ্নের স্কুল শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে শোকর্যালি, দোয়া মাহফিল ও কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাব হুমায়ূন স্মরণে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও হুমায়ূনের লেখা গান পরিবেশন করবে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে তার মৃত্যুবার্ষিকী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi
কমেন্ট বক্স